1. nerobtuner@gmail.com : শ্যামল বাংলা : শ্যামল বাংলা
  2. info@shamolbangla.net : শ্যামল বাংলা : শ্যামল বাংলা
কুমিল্লায় বিএনপির ঘাঁটিতে নজর পড়েছে জামায়াত ও এনসিপির - দৈনিক শ্যামল বাংলা
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১০:৩৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
চৌদ্দগ্রামে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নির্যাতন, থানায় অভিযোগ চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ৭৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষনা কুমিল্লায় বিএনপির ঘাঁটিতে নজর পড়েছে জামায়াত ও এনসিপির সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল গ্রেপ্তার এক ব্যক্তির ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে না থাকার সিদ্ধান্তে একমত বিএনপি আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জামায়াতের আলমগীর কবিরের নারী কেলেঙ্কারি, প্রধান উপদেষ্টার কাছে অভিযোগ সচিবালয়ে কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৫ কাল থেকে শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লাক্ষাধিক শিক্ষার্থী শিক্ষা কমিশন হলেই শিক্ষাখাতের সকল সমস্যার সমাধান হবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা

কুমিল্লায় বিএনপির ঘাঁটিতে নজর পড়েছে জামায়াত ও এনসিপির

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
  • ১৩ বার

আয়তন ও জনসংখ্যায় অন্যতম বড় জেলা হওয়ায় রাজনীতিতে কুমিল্লার বেশ প্রভাব রয়েছে। রাজধানীর অদূরের জেলাটি মূলত জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থি অধ্যুষিত। এখানে যুগ যুগ ধরে রাজত্ব করেন বিএনপি নেতারা।

কোথাও কোথাও জামায়াতে ইসলামীরও একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে। মাঝে প্রায় দেড় দশক এলাকাটি অবৈধভাবে কবজায় রেখেছিল আওয়ামী লীগ। জুলাই বিপ্লবে তাদের জুলুম-নির্যাতন ও দুঃশাসনের অবসান হওয়ায় পাল্টে গেছে পুরো চিত্র। এবার বিএনপির এ ঘাঁটিতে ভাগ বসাতে চায় জামায়াত ও তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

কুমিল্লার ১৭টি উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের ১১টি আসন গঠিত। এসব আসনে নবীন-প্রবীণ ও হেভিওয়েট প্রার্থী মিলিয়ে এবার বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ ও ইসলামি দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে মাঠে নেমে পড়েছেন তারা। চেষ্টা করছেন নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে যেতে।

কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস)

দেশের ‘লাইফলাইন’খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কঘেঁষা আসনটি স্বাধীনতা উত্তর নির্বাচনগুলোয় বিএনপি ছাড়া কোনো দলই প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে আসনটি বিএনপির ঘরেই ছিল। মাঝে দেড় দশক দখলে রাখে আওয়ামী লীগ। গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে এ আসনের হিসাব-নিকাশও হচ্ছে ভিন্নভাবে। এবার বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী খন্দকার মোশাররফের ছেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার মারুফ হোসেন। খন্দকার মোশাররফ অসুস্থ থাকায় এবার নির্বাচন করবেন তার ছেলে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী আমলে আন্দোলন-সংগ্রামেও সক্রিয় ছিলেন খন্দকার মারুফ।

তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, কুমিল্লা-১ আসনে এবার কাকে বিএনপির টিকিট দেওয়া হবে, তা এখানো নিশ্চিত হয়নি। খন্দকার মোশাররফ খুবই অসুস্থ হওয়ায় তার ছেলে ভোটযুদ্ধে নামছেন। খন্দকার মারুফ নির্বাচন করলেও তার প্রতিন্দ্বন্দ্বী কেউ সুবিধা করতে পারবেন না।

খন্দকার মারুফ বলেন, ‘বাবা অসুস্থ থাকায় আমি নির্বাচন করব। এবার বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষও আমাকে চান ।’

বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতার বিপক্ষে একক প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। দাউদকান্দি উপজেলা শাখার আমির মনিরুজ্জামান বাহলুলকে আগাম মনোনয়ন দেওয়ায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করছেন, সমৃদ্ধ করছেন ভোটব্যাংক। এরই মধ্যে এবার জামায়াত, এনসিপি এবং ইসলামপন্থি দলগুলো আসনটিতে জোটগতভাবে নির্বাচন করবে বলে গুঞ্জন চলছে। এটি হলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বড় প্রভাব পড়তে পারে ভোটের ফলাফলে।

তবে ইসলামী আন্দোলনের কুমিল্লা জেলা পশ্চিমের সাবেক সভাপতি মাওলানা বশির আহমেদকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনিও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা)

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের শক্ত ঘাঁটি ছিল এ আসন। তার মৃত্যুর পর ২০১৮ সালে এখানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফকে প্রার্থী করেছিল বিএনপি। তিনি অসুস্থ থাকলেও এবারও তার প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। পাশাপাশি দলের টিকিট বাগাতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগ) অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া ও খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএস ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন।

মেঘনা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল গাফফার বলেন, ‘সর্বশেষ বিএনপির মনোনয়নে ড. খন্দকার মোশাররফ এখানে নির্বাচন করলেও তৎপর আছেন অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া। তবে দল যাকে ধানের শীষ দেবে, আমরা তার পক্ষেই কাজ করব।’

আসনটি আয়ত্তে নিতে তৎপর জামায়াতও। এজন্য দলটি প্রার্থী ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও হোমনা-মেঘনা উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মোল্লাকে। আগেই মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ায় প্রচারে এগিয়ে আছেন তিনি। কোনো অঘটন না ঘটলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

এদিকে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলমও মাঠে কাজ করছেন । আর এনসিপি প্রার্থী ঘোষণা না করলেও শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে বলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন।

কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর)

প্রচলিত আছে ‘মুরাদনগরের মাটি কায়কোবাদের ঘাঁটি’। জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের দিক দিয়ে সাবেক মন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ এ এলাকার অঘোষিত জনপ্রতিনিধি। কিন্তু আওয়ামী দুঃশাসনের জাঁতাকলে তিনি রাজনীতির মাঠে টিকতে না পেরে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। দিনবদলের পর ফিরে এসে আবারও জনগণের হৃদয়ে জায়গা পুনরুদ্ধার করছেন। এবারও তিনি প্রার্থী হতে চান। তৎপর আছেন নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক কর্মসূচি নিয়ে।

আসনটি নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জনও রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, এবার এখানে এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তার বাবা একবার এ বিষয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণাও দিয়েছিলেন। তবে তিনি এখনো অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদে থাকায় বাস্তবে কী ঘটবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে টানাপড়েন চলছে। মাঝেমধ্যেই পাল্টাপাল্টি নানা অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।

বিএনপির ভোট বেশি হলেও জামায়াতের বেশ প্রভাব রয়েছে এ আসনে। দলটির কুমিল্লা উত্তর জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ইউসুফ হাকিম সোহেল এলাকায় অন্যতম জনপ্রিয় নেতা। একবার তিনি মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার তাকে জাতীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত।

এ ছাড়া ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির কোনো প্রার্থী ঘোষণা না হলেও নেতাকর্মীরা জনসমর্থন আদায়ে কাজ করছেন।

কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার)

কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক বুকে আগলে রেখেছে দেবীদ্বার উপজেলা। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় আসনটির গুরুত্ব রয়েছে সব মহলে। যুগ যুগ ধরে এলাকাটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ধানের শীষের প্রতি রয়েছে ব্যাপক জনসমর্থন। তবে এবার দলটির অন্তর্কোন্দল ও গ্রুপিংয়ের কারণে পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব।

মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সাবেক এমপি মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি ও তার ছেলে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রিজভীউল আহসান মুন্সি, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সি এবং রাজধানীর গুলশান থানা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এমএ আউয়াল খান।

তাদের সবাইকে ছাপিয়ে এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। দলটির মনোনয়নে তিনি প্রার্থী হতে পারেন বলে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তার নেতৃত্ব ও নতুন বাংলাদেশে তার ভূমিকায় জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। এতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ভোটের মাঠে। এমনকি অন্তর্কোন্দল মেটাতে না পারলে বিএনপির একাংশেরও হাসনাতের পক্ষে কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে ।

এ আসনেও একক প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। দলটির উত্তর জেলা সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদকে আগেই মনোনয়ন দেওয়ায় নানা কর্মসূচির মাধ্যমে চালাচ্ছেন ব্যাপক প্রচার। ইতোমধ্যে উপজেলার কোনায় কোনায় ঢুঁ মারছেন তিনি। বাড়ানোর চেষ্টা করছেন ভোট। তবে আর কোনো দলের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি।

কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া)

বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনটি দুর্বল নেতৃত্বের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু অংশ এবং ভারত সীমান্তবর্তী বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিএনপির ভোট বেশি থাকলেও নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেন না প্রার্থীরা। স্বাধীনতার পর শুধু ২০০১ সালে জিতেছিল ধানের শীষ। এ ছাড়া প্রতিবার মনোনয়ন বিতর্কে ডুবেছেন দলটির প্রার্থীরা।

এবার মনোনয়ন চাইবেন ২০০৮ সালের প্রার্থী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এসএম আলাউদ্দিন ভূঁইয়া, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন, বুড়িচং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম মিজানুর রহমান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী জসিম উদ্দিন।

এদিকে আসনটিতে অবস্থান জোরদার করতে হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. মোবারক হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে হরদম চালাচ্ছেন প্রচার। উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন তরুণ ভোটারদের।

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকার চেষ্টা করছেন। তবে এখনো ঘোষণা হয়নি এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ ও এবি পার্টির প্রার্থীর নাম।

কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা)

এ আসনে বিএনপি শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় আছে জামায়াতসহ অন্য ইসলামি দল। কথিত আছে, কুমিল্লা সদর আসনে যে প্রার্থী বিজয়ী হন, তার দল সরকার গঠন করে। এজন্য আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবার বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আমিন-উর রশিদ ইয়াছিন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।

আগের সিটি নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। দুজনেই এবার সংসদ নির্বাচন করতে চান। বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশে বিষয়টি স্পষ্টও করেছেন তারা। আসনটি দখলে নিতে দুজনই মরিয়া থাকায় মূল লড়াই তাদের মধ্যেই হতে পারে।

তাদের বাইরে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির (কুমিল্লা বিভাগীয়) সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য কায়সার জামান বাপ্পী এবং কুমিল্লা বারের পিপি সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ছোট ভাই ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়ক কাইয়ুমুল হক রিঙ্কু।

এদিকে গুরুত্বপূর্ণ আসনে নতুন করে ঘাঁটি গাড়তে চায় জামায়াত। দলটি এবার প্রার্থী ঘোষণা করেছে মহানগর শাখার আমির কাজী দ্বীন মুহাম্মদকে। প্রচারে এগিয়ে থাকায় তার পাল্লা কিছুটা ভারী হতে পারে। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি জনগণের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

এ ছাড়াও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম, এনসিপি, এবি পার্টি এবং গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরাও মাঠে সবর আছেন।

কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা)

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত খাদি-খদ্দরের চান্দিনায় মূলত লড়াই হবে বিএনপি, জামায়াত ও এলডিপির প্রার্থীর মধ্যে। ত্রিমুখী এই প্রতিন্দ্বন্দ্বিতার মাঠে এবার সরব আছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আতিকুল আলম শাওন। এ ছাড়া কয়েকজন ভেতরে ভেতরে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

লিভারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ চারবারের সংসদ সদস্য। তিনি দলটির প্রার্থী হিসেবে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। তিনি বিএনপির সম্ভাব্য জোট থেকে এবার মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন।

অপরদিকে জামায়াত ইতোমধ্যে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাওলানা মোশাররফ হোসেনের নাম ঘোষণা করেছে। তিনি উপজেলার সর্বত্র গণসংযোগ, সমাবেশ করছেন।

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের হয়ে মাঠে সরব আছেন মুফতি এহতেশামুল হক কাসেমী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক নিজামুল আহসান পাপন মজুমদার।

বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, এলডিপি নেতা ড. রেদোয়ান আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে বিএনপিকর্মীদের অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন। এ কারণে তিনি বিএনপি জোটের প্রার্থী হলে তৃণমূলের ভোট যাবে জামায়াতের পাল্লায়।

কুমিল্লা -৮ (বরুড়া)

আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। একক নেতা হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন। তবে যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মুরতাজুল করিম বাদরুও মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে।

এ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন অধ্যাপক শফিকুল আলম হেলাল । তিনি কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন।

কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ)

জেলার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। পরিবর্তিত বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচনে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের নিয়ে। জামায়াত একক প্রার্থী হিসেবে ড. সৈয়দ একেএম সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকীর নাম ঘোষণা করায় তিনি প্রচারের মাঠে বেশ সুবিধা পাচ্ছেন।

অপরদিকে বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের মধ্যে আলোচনায় এগিয়ে আছেন চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম, সাবেক এমপি মরহুম কর্নেল (অব.) এম আনোয়ার উল আজিমের একমাত্র মেয়ে ওভেল গ্রুপের পরিচালক সামিরা হোসেন দোলা, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট এটিএম আলমগীরের ভাই সাবেক জনপ্রশাসন সচিব ড. একেএম জাহাঙ্গীর, শাহ্ শরীফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোবারক উল্লাহ মজুমদার, নেক্সাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এবং নব্বইয়ের ডাকসু সদস্য ড. রশিদ আহমদ হোসাইনী ।

এ ছাড়া ইসলামিক ফন্টের প্রার্থী মীর মো. আবু বাকার, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সেলিম মাহমুদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ কে গ্রুপের (এ কে ট্রেডার্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ খালেক সরব আছেন।

কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট)

বিএনপির তিন নেতা এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারা হলেন ২০১৮ সালে মনোনয়ন পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, ২০০৮ সালে মনোনয়ন পাওয়া দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া ও ২০০১ সালের সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়া।

এদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মাওলানা ইয়াসিন আরাফাত । ইতোমধ্যে তিনি ব্যাপক প্রচার পেয়েছেন। নানা কর্মসূচি নিয়ে যাচ্ছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। তরুণ এই প্রার্থী প্রচারে এগিয়ে থাকায় মানুষের আস্তা অর্জন করতে পারছেন বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

এ ছাড়া এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীন শিশিরের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম)

কথিত আছে ‘চৌদ্দগ্রামের মাটি, জামায়াতের ঘাঁটি’। এখানে হেভিওয়েট প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি আগেও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ছাত্রশিবিরের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের বাড়িও এ উপজেলায়। আর আওয়ামী জামানায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা গুম, খুন ও অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসব বিষয় দলটির প্রতি জনগণের সহানুভূতি বাড়িয়েছে।

অপরদিকে নতুন করে ইতিহাস গড়তে চান কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা। ইতোমধ্যে নানারকম বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আছেন তিনি। দলটি মনোনয়নপ্রত্যাশী আরো কয়েক নেতা হলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কাজী নাসিমুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. গোলাম কাদের চৌধুরী নোবেল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এএনএম নিয়াজ মাখদুম মাসুম বিল্লাহ।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী নিয়াজ মাখদুম মাছুম বিল্লাহ বলেন, আমি দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল । আমি বিশ্বাস করি, পরীক্ষিত ও নিবেদিত কর্মী হিসেবে দল থেকে আমি মনোনয়ন পাব।

ছাত্রজীবন থেকে জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতির করছি। দুই দশক ধরে কুমিল্লা-১১ নির্বাচনি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দল আমার ত্যাগ ও অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আশাবাদী।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নতুন বাংলাদেশে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এটি অন্যরকম উৎসবের নাম। তাই আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট দিতে চায় জনগণ। আগের মতো ব্যালট ছিনতাই ও কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটবে না বলে সবার প্রত্যাশা। একই সঙ্গে চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত, টেন্ডারবাজ ও সন্ত্রাসীরা যেন আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে, সে বিষয়ে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে।

তরুণ ভোটার শিক্ষার্থী মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা মনে করি ফেয়ার নির্বাচন হবে। জনগণ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। প্রার্থীদের বাস্তবসম্মত ইশতেহার দিতে হবে এবং তা পূরণ করতে হবে। রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি, যোগ্যতা, সততা ও দেশপ্রেম দেখেই ভোট দেব।’

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত বাবুল বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশের মানুষের প্রথম চাওয়া ভোটের অধিকার। দেড় দশক মানুষ ভোটবঞ্চিত হওয়ায় এ আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। নতুন ভোটাররা এমন প্রার্থীকে নির্বাচন করতে চায়, যিনি দলমত নির্বিশেষে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবেন। ভবিষ্যতে আবার ভোটাধিকার কেড়ে নেবে না, এমন নিশ্চয়তাও চায় জনগণ। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষমতাটা যেন ভোটারদের হাতেই থাকে। এটাই নতুন প্রজন্মের চাওয়া ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

মন্তব্য করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2025 sweb.net
ডেভলপ ও কারিগরী সহায়তায় sweb.net