ড. মিয়া মুহাম্মদ আইয়ুব
২০১০ সালের দিকে ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনা বলেছিলেন, পিতার সম্পত্তিতে ভাই ও বোনের সমানাধিকার দেয়া উচিত। নারীর সম অধিকারের কথা আলোচনা করতে গিয়ে এই স্বৈরাচার বলেছিলেন, ‘সম্পত্তিতে নারীর সম অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। বিষয়টি বাস্তবায়নের চিন্তা আমার রয়েছে। যথাসময়ে এটি প্রকাশ করা হবে। না হলে অনেক মহল শরিয়তের দোহাই দিয়ে নানাকিছু বলতে শুরু করবে।’
তখন এই নিবন্ধকার শেখ হাসিনার মন্তব্যের সমালোচনা করে নয়া দিগন্তের উপসম্পাদকীয় কলামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। সম্প্রতি নারী অধিকার কমিশনের যে প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে এর বেশ কিছু সুপারিশ নিয়ে দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ চলছে। ফেসবুকে বিশিষ্ট আলোকচিত্র শিল্পী শহীদুল আলমের একটি ভিডিও ক্লিপে তার কিছু বক্তব্য শুনলাম। ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের একজন সৈনিক। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তাকে জেলজুলুম সইতে হয়েছে। এজন্য সবার কাছে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি তিনি। তিনি বেশ দরদ ও আন্তরিকতার সাথে বলেছেন, তারা দুই ভাই ও এক বোন। এক ভাই ও বোন তার বড়। স্মরণযোগ্য, কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টনের প্রশ্নটি আসে তার মৃত্যুর পরে। কিন্তু শহীদুল আলমের বাবা জীবিত থাকতে দুই পুত্র-কন্যাকে সম্পত্তির সমান ভাগ করে বণ্টন করে দিয়েছেন। এ নিয়ে তাদের পরিবারে কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেননি। বাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে পুত্রের কোনো প্রশ্ন তোলারও অবকাশ নেই। বাবা জীবিত থাকাকালে তার মেয়েকে ছেলের সমান সম্পত্তি দিলে তাতে ইসলাম কোনো বাধা দেয়নি। প্রশ্নটি দাঁড়িয়েছে বাবার মৃত্যুর পরে সম্পত্তি বণ্টন হতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে। মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের জন্য জীবনবিধান দিয়েছেন। মানুষ প্রয়োজনে তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা খাটিয়ে নানাবিধ বিধিবিধান তৈরি করে নিয়েছে; কিন্তু বেশ কিছু মৌলিক ও জটিল বিষয়ে আল্লাহ সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে উত্তরাধিকার আইন। বিষয়টি দেখতে হবে সার্বিক দিক বিবেচনায়। মুসলিম নারী ও পুরুষের দায়-দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব এককভাবে স্বামী তথা পুরুষের। স্ত্রীর দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানদের পরিচর্যা ও পরিবারের সম্পত্তির দেখাশুনা করা। একজন নারী যখন মাতৃত্বধারণ করেন তখন তার অনেক কাজ সীমিত হয়ে পড়ে। আবার উপার্জনের অনেক কঠিন শ্রমসাধ্য কাজও নারীর পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য মহান আল্লাহ পুরুষের অধিকতর দায়িত্ব বিবেচনায় তাকে বেশি সম্পত্তি দিতে বলেছেন।
বিষয়টি নিয়ে ২০১০ সালে যে লেখাটি লিখেছিলাম তা আবার প্রাসঙ্গিক হওয়ায় কাটছাঁট করে পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি। বেশ কয়েক বছর আগে আমেরিকা সফরকালে টালসা নগরীতে সাক্ষাৎ হয়েছিল মার্কিন এক নারী নেত্রীর সাথে। তিনি কয়েক বছর আগে খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং এখনো আগের মতো কমিউনিটির একজন নেত্রী। আলাপে জানালেন, তিনি প্রায়ই আমেরিকান মহিলাদের কাছে ইসলাম প্রচারে যান এবং ইসলামের বিভিন্ন দিক তাদের সামনে তুলে ধরেন। নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রশ্নে ইসলামের নীতি সম্পর্কে যখন বলেন, ইসলামে স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর বর্তায়; এ ব্যাপারে স্ত্রীর কোনো দায়িত্ব নেই। স্ত্রী চাকরি বা ব্যবসা করলে তার আয় অন্য কাউকে দিতে বাধ্য নন। এ কথা জানার পর মার্কিন নারীরা মুসলিম স্বামী গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অনেক মার্কিন নারী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নাকি বলেন, তাদের স্বামীর সাথে বাজার খরচ, বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন বিল থেকে শুরু করে সব কিছুতে শেয়ার করতে হয়। অনেক আমেরিকান মেয়ে এখন বিয়ে করতে চান না। তারা বিস্মিত হন, মুসলিম নারীদের এ বিষয়ে কোনো ভাবনা নেই; বরং তারা চাকরি বা ব্যবসা করে স্বাচ্ছন্দ্যে আয় করতে পারেন।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন দিক রয়েছে। এর মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন অন্যতম। সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার কতটুকু সে সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআনে সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এতে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার ছেলে যা পাবে মেয়ে পাবে তার অর্ধেক। বিষয়টি নিয়ে যুগে যুগে কিছু বিভ্রান্ত লোক অযৌক্তিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। আমাদের সমাজেরও বেশ কিছু তথাকথিত প্রগতিবাদী না জেনেশুনে বা বিষয়টির গভীরে না গিয়ে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার ছেলে-মেয়ের সমান অংশের কথা বলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি তুলছেন। তাদের ভাবখানা এই যে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার ছেলে-মেয়ের সমান অংশ নিশ্চিত হলে দেশে নারীর ক্ষমতায়ন হয়ে যাবে। তারা এজন্য ইসলামী শরিয়াহ আইন পরিবর্তনের কথা বলেন। যারা শরিয়াহ আইনবিরোধী কোনো উদ্যোগের বিরোধিতা করেন তাদের নারী অধিকারবিরোধী, ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, ফতোয়াবাজ ইত্যাদি অভিধায় কটাক্ষ করা হয়। যারা ইসলামী শরিয়াহ আইন চান; তারা কি নারীর অধিকার চান না? বিষয়টি এভাবে দেখলে ভুল হবে। এ নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে নয়, সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করতে হবে। পারিবারিক আইনে সব দেশে কমবেশি ধর্মীয় আইন প্রাধান্য দেয়া হয়। আমাদের দেশে ব্রিটিশ আমলে বহু আইনের পরিবর্তন আনা হলেও মুসলিম পারিবারিক আইন অক্ষুণ্ন রাখা হয়। ইসলামের পারিবারিক আইনের বিষয়টি সার্বিক অর্থে দেখতে হবে। ইসলাম একজন মুসলিম নারীর অধিকার সংরক্ষণে যেসব ব্যবস্থা রেখেছে তা হলো : এক. বিয়ের সময় ন্যায়সঙ্গত মোহরানা ধার্য ও তা পরিশোধ বাধ্যতামূলক; দুই. পরিবারের সদস্যদের তথা স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর বর্তায়; এ ব্যাপারে স্ত্রীর কোনো দায়িত্ব নেই; তিন. স্ত্রী চাকরি বা ব্যবসা করলে আয় অন্য কাউকে দিতে বাধ্য নন; চার. বাবার সম্পত্তিতে মেয়ে ছেলের অর্ধেক পাবে; পাঁচ. বাবা জীবিতাবস্থায় মেয়েকে যা খুশি ‘হেবা’ (গিফট) করে দিতে পারেন।
ধরা যাক, এক ব্যক্তি এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা গেলেন। তার সম্পত্তি আল্লাহর আইন মোতাবেক বণ্টন করা হলো। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে ছেলে পেলেন দুই লাখ টাকা এবং মেয়ে পেলেন এক লাখ টাকা। ছেলে বিয়ে করতে গিয়ে তার স্ত্রীকে মোহরানা প্রদান ও অন্যান্য খাতে ব্যয় করলেন এক লাখ টাকা। এতে তার হাতে রইল এক লাখ টাকা। এ দিয়ে তার ও তার স্ত্রীর ভরণপোষণ করতে হবে। সন্তান হওয়ার পর তাদের খরচও বহন করতে হবে। নতুন কোনো আয় না করে শুধু বাবার সম্পত্তি দিয়ে তার এতে মোটেই চলবে না। অন্যদিকে, মেয়ে বাবার সম্পত্তি থেকে এক লাখ টাকা পেলেন। তার বিয়ে হলে স্বামীর কাছ থেকে মোহরানা হিসেবে এক লাখ টাকা পেলেন; এতে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়াল দুই লাখ টাকা। তার নিজের কোনো খরচ নেই; এমনকি সন্তান হলেও কোনো খরচ করতে হবে না। কারণ, ইসলাম স্বামীকে তার স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব দিয়েছে। স্ত্রীর সম্পদের ওপর স্বামীর বা অন্য কারো কোনো অধিকার নেই। এমনকি স্ত্রী চাকরি করলে বা ব্যবসা করলে তা থেকে যে মুনাফা হবে তাতেও কারো কোনো হক নেই। স্ত্রী তার চাকরির বা ব্যবসার আয় স্বামীর সংসারে ব্যয় করতে বাধ্য নন। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। অন্যদিকে সংসারের সব খরচ বহনে বাধ্য স্বামীর সম্পদ বৃদ্ধির সুযোগ কমে যাবে। নানা কারণে তার খরচের পরিমাণ বাড়তে থাকবে। যেমনÑ মুসলমানদের সমাজ-সংস্কৃতিতে বাবার অবর্তমানে ছেলে বংশের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন; যেখানে তার মা, বোন ও আত্মীয়স্বজনের মেহমানদারি এবং বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালনে ছেলের ওপর ব্যয়ের একটি দায়দায়িত্ব থাকে। মূলত ইসলামের বণ্টননীতি অনুসৃত হলে নারীরা লাভবান হন; ঠকেন না। তিনি আরো বলেছেন, কোনো বাবা জীবিত থাকাকালে চাইলে তার মেয়ে/মেয়েদের হেবা বা দান হিসেবে যে কোনো পরিমাণ সম্পত্তি দিতে পারেন। সুতরাং মেয়েদের বঞ্চিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
প্রগতিবাদীরা প্রশ্ন করতে পারেন, বুঝলাম ইসলাম মুসলিম নারীকে নানাবিধ সুবিধা দিয়েছে, কিন্তু সেগুলো প্রতিপালিত হচ্ছে কোথায়? এরূপ প্রশ্ন অবশ্যই প্রাসঙ্গিক। এক্ষেত্রে আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। আমরা দেখতে পাচ্ছি : সমাজে বিয়ের সময় ন্যায়সঙ্গত মোহরানা ধার্য হচ্ছে না। বাধ্যতামূলকভাবে পরিশোধ করা হচ্ছে না। এমনকি মোহরানার বিষয়ে বিবাহিতা নারীর কোনো ভূমিকা থাকে না। নারী বা পুরুষ অনেকে ভালো মতো জানেনও না যে, স্ত্রীকে মোহরানা দেয়া ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর বর্তালেও ইদানীং চাকরিজীবী নারীকে সংসারে খরচ দিতে বাধ্য করা হয়। অনেক যুবক চালাকির সাথে চাকরিজীবী স্ত্রী পছন্দ করেন। বাবার সম্পত্তিতে ছেলে মেয়ের অর্ধেক পাওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বোনেরা ভাইদের কাছ থেকে বাবার সম্পত্তির অংশ আদায় বা ভোগ করতে পারেন না। বাবা জীবিত অবস্থায় মেয়েকে বিয়ে দেবার সময় যা খুশি উপঢৌকন দিতে পারলেও বাস্তবতা হচ্ছে, মেয়ের পরিবর্তে দিতে হয় জামাইকে খুশি করতে বিরাট আকারের যৌতুক। বাবা বা মেয়ে তা দিতে ব্যর্থ হলে নারীকে সইতে হয় নির্যাতন; এমনকি জীবনও দিতে হয়। সুতরাং সঙ্গতভাবে প্রশ্ন তোলা যায় যে, আমাদের সমাজের এ অজ্ঞতা ও দায়িত্বহীনতার মধ্যে কিভাবে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে? কিন্তু লক্ষ করুন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের নীতিমালা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কিন্তু সমাজে যদি তা অনুশীলন করা না হয় সেজন্য ইসলামী নীতি দায়ী হতে পারে না। বরং আমরা অভিযুক্ত। এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা এসে যায়। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের ধর্ম ইসলাম এবং রাষ্ট্রীয় যেসব আইন রয়েছে তার বাস্তবায়নে কঠোর হওয়া। এসব বিধিবিধান কার্যকর না করে নতুন নতুন আইন বা নীতি তৈরির কসরত করে বিশেষ লাভ হবে না। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বিবেচনা করা যেতে পারে :
ক. ইসলামী শরিয়ার আলোকে ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নির্ধারণ করতে সরকার আলেম, ইসলামী পণ্ডিত ও আইনজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে পারে। এ কমিটি ইসলামের বিভিন্ন ফিকাহর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত (ফতওয়া) পর্যালোচনা করে সরকারকে উত্তম পরামর্শ দিতে পারে।
খ. নারী তার বাবার সম্পত্তি থেকে যা পাবেন তা আদায়ে বিশেষ আইন করা যেতে পারে। বিশেষ করে নারী যাতে বাবার সম্পত্তির অংশ হিসেবে তার বাড়িতে ন্যায্য অংশ পান তা নিশ্চিত করতে দেশের বিদ্যমান কোনো আইনে জরুরি ভিত্তিতে তা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এর ফলে একজন নারী যদি তালাকপ্রাপ্তা হয়ে যান সেক্ষেত্রে তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার ব্যাপারে শক্ত অধিকার সৃষ্টি হবে। এর ফলে ভাইদের পক্ষ থেকে বোনদের ঠকানোর বা বঞ্চিত করার অন্তত একটি সুযোগ কমে যাবে।
গ. বাবা ইচ্ছা করেন মেয়েকে জীবিত থাকাকালে কিছু হেবা (গিফট) করবেন, সে ক্ষেত্রে বর্তমানে সরকারি রেজিস্ট্রেশন ফি অনেক। এ সমস্যা দূর করতে রেজিস্ট্রেশন ফি হ্রাসকৃত হারে নির্ধারণে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। এ বিষয়ে আলেমসমাজকে গুরুত্বসহকারে নসিহত করতে পারেন। স্ত্রীর মোহরানা নির্ধারণে সরকার একটি নীতিমালা করে দিতে পারে। এজন্য আলেম ও আইনজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া যেতে পারে। মোহরানা পরিশোধ নিশ্চিত করতে কঠোর আইন করা হোক। একজন নারী যদি বিয়ের সময় শুধু ন্যায্য মোহরানার অর্থ হাতে পান এবং তা সংরক্ষণ করতে পারেন তাহলে দেশে নারীর ক্ষমতায়ন অনেক দূর এগিয়ে যাবে। নারীসংগঠনগুলো এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।
নারী উন্নয়ন নীতিমালায় এটা যোগ করা যেতে পারে যে, পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে স্বামীর অনুমতি নিয়ে স্ত্রী চাকরি বা ব্যবসা করতে পারবেন, তবে স্ত্রী তার আয় স্বামীর সংসারে দিতে বাধ্য থাকবেন না। স্ত্রী স্বেচ্ছায় যাকে খুশি দিতে পারবেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, ইসলামের নীতিমালাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে সমাজে নারীর সুষম অধিকার সুনিশ্চিত হবে। মনে রাখতে হবে যে, মাথাব্যথা হলে মাথা না কেটে যেমন চিকিৎসা করাটাই যুক্তিসঙ্গত, তেমনি ইসলামী আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় নারী বঞ্চিত হলে সেজন্য ইসলামী আইনকে দোষী না করে সেটির যথাযথ বাস্তবায়ন করা বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যদিকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নিজ নিজ ধর্মবেত্তা ও আইনজীবীদের পরামর্শে তাদের সম্প্রদায়ের নারীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হবে।
লেখক : গবেষক ও সাবেক সচিব